Aishani Som, VIII E (2019-20)
অমিতবাবু সদ্য রাজারহাটে একটি বহুতল আবাসনে ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি সস্ত্রীক ছেলেকে নিয়ে সেখানে কিছুদিন আগে গৃহ পরিবর্তন করেন। আবাসনটির সামনে একটি বড়ো খেলার মাঠ আছে। সেখানেই রোজ সন্ধ্যেবেলায় অমিতবাবুর ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায় ।
অমিতবাবুর বাড়ি ফিরতে রোজ দেরি হয়ে। কখনো কখনো মাঝরাত ও হয়ে যায়। আজ তার ব্যতিক্রম হল না। অফিস এর গাড়ি তাঁকে গলির মুখে নামিয়ে দিয়ে মিনিট পাঁচেক আগে বেরিয়ে গেছে। পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ অতিক্রম করে অমিতবাবু বাড়ি পৌঁছোবেন ।
অমিতবাবু দেখলেন যে আকাশে মেঘ করেছে। চারিদিক অন্ধকার। ঝিঁঝি পোকার ডাক ছাড়া কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাঝে মাঝে রাজপথ দিয়ে দু-একটা গাড়ি চলাচল করছে মাত্র।
অমিতবাবু হঠাৎ যেতে যেতে ছোটদের খেলার মাঠের দিকে তাকালেন। মাঠের ভিতরের দৃশ্য দেখে তাঁর হাঁটা থেমে গেল । একটি দোলনা যেন এমনি এমনি দুলছে। তিনি দেখলেন কোথাও তো হাওয়া হচ্ছে না, তাহলে সেটা দুলছে কীভাবে । একদিকে নিকষ অন্ধকার ও অন্যদিকে নিস্তব্ধতায় যেন তাঁর গা ছমছম করে উঠল।
খানিকক্ষণ পরে অমিতবাবু শুনলেন কারা যেন মাঠে ছুটোছুটি করছে, হাসাহাসি করছে। কিন্ত অমিতবাবু কাউকে দেখতে পেলেন না। তিনি অনুভব করলেন তাঁর পা দুটি অবশ হয়ে গেছে। তিনি কিছুতেই এগোতে পারছেন না। তাঁর মনে হল যারা এত রাতে মাঠে খেলছে, তারা কি আদৌ মানুষ? নাকি -?
অমিতবাবু ওরকম হতভম্ব হয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন সেটা তাঁর মনে নেই। তাঁর ঘোর কাটল তাদের পরিচারক রঘুর ডাকে। সে রাস্তার অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে ডাকছে,” বাবু বাবু এদিকে!” রঘু এখানকার অনেকদিনের বাসিন্দা। তাই এই এলাকার খুঁটিনাটি তার সমস্ত জানা ।
অমিতবাবু তাকে প্রশ্ন করলেন “ এখানে এত রাতে কারা খেলছে?” রঘু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”আসলে এখানে এই বাড়িটা ওঠার আগে একটা গোরস্থান ছিল। কিন্তু বাড়ি তৈরির সময় অনেকগুলো গোর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই গোরে যে বাচ্চাদের কবর দেওয়া ছিল তারা রোজ এখানে খেলতে আসে । ওরা কারো ক্ষতি চায় না জানেন তো, ওরা শুধু মৃত্যুর পরে ওদের প্রাপ্য শান্তিটা চায়।“