Srija Dasgupta VIII B, (2019-20)
” আমি ভূতে ভয় পাই না।”, ঈশা গাম্ভীর্যের সাথে বলল।
” ও তাই বুঝি? কিন্তু কখনো কখনো তো পাস -তাই না?” এই কথা বলতে বলতে তার চার বন্ধু হেসে গড়িয়ে পড়লো।
“না….পাই না…..”, উচ্চস্বরে চিৎকার করল সে , যেটা তার বন্ধুদের চুপ করানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। থমথমে পরিবেশটা অনুভব করতে পেরে মনে মনে খুশি হল ঈশা আর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তার বন্ধুরা কিছুক্ষণ চুপ থাকল তারপর ফিসফিস করে বললো, “আচ্ছা দেখা যাবে…তুই ভূতে ভয় পাস কি না!”
একেই অমাবস্যার রাত, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তার ওপর হস্টেলের মধ্যে ভূতের উপদ্রবের নানা আজগুবি সব গল্পের শেষ ছিল না।
“দেখ্ দেখ্ ওই ঘরটায় ঈশা ঢুকল।”, অনির্বাণ, রাজ, রাই ও দেবাঙ্গনা এতক্ষণ ঈশার ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল কিন্ত সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে – কখনো দেয়ালের পিছন থেকে, কখনো সিঁড়ির উপর দিয়ে। বড়োদিনের ছুটিতে প্রায় সবাই বাড়ি চলে গিয়েছিল, আর অন্য যারা ছিল তারাও ঘুমিয়ে পড়েছিল, শুধু ওই পাঁচজন ছাড়া। ঈশাকে ওই ঘরটাতে ঢুকতে দেখে চার জন অন্ধকার করিডোরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল…অনির্বাণ লাইটটাও নিভিয়ে দিল।
মুহূর্তের মধ্যে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাওয়া গেল..সঙ্গে ঈশার চিৎকার, “কেউ আছ???আমি আটকে গেছিইইইইইই…”।
এর মধ্যে রাজ, যে বিভিন্ন ধরনের ডাক নকল করার জন্য হস্টেলে বিখ্যাত ছিল, ঘরের বাইরে থেকে ভুতুড়ে আওয়াজ করতে লাগল। দরজা ধাক্কানোটা হঠাৎ থেমে গেল।
“হ্যাঁরে.. অজ্ঞান হয়ে গেল নাকি”, রাই ফিসফিস করে বলল- যখন দুঘন্টা পরও ঘরের মধ্যে আর কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
“চল্ না…এবার ফিরে যাই… ওকে বেরিয়ে আসতে দে”। দেবাঙ্গনা বলল- যে এতক্ষণ ভয় পেয়ে চুপ করে বসে ছিল। “এই তুই চুপ করবি, এত যখন ভয় পাস তখন আসিস কেন বল্ তো?” এই বলে অনির্বাণ ও রাজ দরজাটা খুলে চুপি চুপি ঘরের মধ্যে ঢুকলো। অনির্বাণ ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে রাজ বলল, ” কোথায় গেলো ঈশা? এখানে তো নেই, আর বেরোবেটাই বা কোন্ দিক দিয়ে – একটাইতো দরজা”।
অনির্বাণের কোন উত্তর না পেয়ে রাজ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, “কী হ……..?” রাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনির্বাণ দেয়ালের দিকে আঙুল দেখাল.. তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছিল না। টর্চের আলোতে দ্যাখা যাচ্ছিল যে দেওয়ালে লাল রং দিয়ে কিছু লেখা…. :
“তোদের সত্যিই মনে হচ্ছিল যে আমি ভূতে ভয় পাই?!! কীইইরে তোরা….আচ্ছা আমায় এটা বল্, আমি নিজে নিজের থেকে কেন ভয় পেতে যাব?”