চুরি থেকে চাকুরি

চুরি থেকে চাকুরি

Ananda Basu, VII A (2019-20)

গোটা এলাকাটা মদনের জন্য অস্থির। সে ছিল অনাথ আর বদসঙ্গে পড়ে ছোটবেলা থেকেই ছিল তার চুরির হাত। ইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই বন্ধুদের পেন্সিল ব্যাগ, বান্ধবীর হেয়ারব্যান্ড, এমনকি প্রিন্সিপালের চশমাও তার হাতের মুঠোয়। তাই তাকে ইস্কুল থেকে বার করে দেওয়া হল। এই নিয়ে তিনবার সে জেলে বন্দি।

একবার এক গোয়ালার বাড়িতে গরু চুরি করবে বলে যেই না ঢুকেছে, অমনি গোবরে পা হড়কে গরুর ওপর গিয়ে পড়েছে। গরুমাতা তেমনি জোরে এক লাথি মেরেছেন ও মদন “বাবাগো মাগো”বলে চিৎকার করতে করতে ধপাস করে পড়েছে। আর তবে থেকেই মদন থানায় বন্দি। তৃতীয় বার যখন সে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তখন ইন্সপেক্টর চোরতাড়ান সিং তাকে ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়ে বলল, “হতচ্ছাড়া ছ্যাঁচোড় কোথাকার, লজ্জা করে না! তিন তিন বার জেলে ঢুকেছিস!” মদন বলল, “লজ্জা কিসের স্যার, এটাই তো আমার প্রফেশন”। এই শুনে চরতাড়ান সিং রেগে লাল হয়ে বললেন, “প্রফেশন, দেখাচ্ছি তোর প্রফেশন! আর একবার আয় না এই জেলে!” মদন ইন্সপেক্টরের মুখ দেখে একদৌড়ে পালালো।

একদিন সে শুনল গ্রামে নাকি এক সাধু এসেছেন, আর ভিক্ষা করে তিনি অনেক টাকা পেয়েছেন। মদন ভাবল সে তাঁর থেকেই চুরি করবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। মদন সাধুবাবার কাছে গিয়ে হাজির। সাধুবাবা তখন ধ্যান করছিলেন। মদন যেই সাধুবাবার ঝুলিতে হাত ঢোকাতে যাবে, অমনি সাধুবাবা বললেন, “তুচ্ছ মানুষ, তুমি এই সব কুকর্ম না করিয়া সংসারের মঙ্গল করো”। মদন কিছু বুঝতে না পেরে বলল, “কি তুচ্ছ টুচ্ছ বলছেন, একটু সহজ করে বলুন না”। সাধুবাবা বললেন, “তুমি চুরি না করে পরিশ্রম করো, আরো ধন উপার্জন করতে পারবে”। এই বলতে বলতে সাধুবাবা চলে গেলেন। সাধুবাবার কথাটা শুনে মদনের মনে একটা খটকা লাগল। কিন্তু তারপরেও সাধুবাবার থেকে কিছু না চুরি করতে পারায় তার খুব রাগ হল আর মনে মনে খুব হতাশ হল।

সে ভাবল যে পরদিন এক বড় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে চুরি করবে। পরদিন রাতে সে চুপি চুপি একটা সিঁধ কেটে সেই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকল। কিন্তু ঢুকেই সে দেখল যে সেই ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। তাঁর কোনো জ্ঞান ছিল না। ওই ব্যবসায়ীর আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়ে কেউ ছিল না। মদন কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তখন সে চুরির কথা ভুলে গিয়ে সেই ভদ্রলোককে ঠেলাগাড়িতে করে তক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে গেল। সে তার চুরির টাকা দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করালো।

কিছুদিনের মধ্যেই সেই ব্যবসায়ী সুস্থ হয়ে উঠলেন। তিনি মদনের ওপর এতটাই কৃতজ্ঞ ও প্রসন্ন ছিলেন যে তিনি তাকে দত্তক নিয়ে নিলেন। অনাথ মদন একজন নতুন বাবা পেল। সেই ব্যবসায়ী তাকে লেখাপড়া শেখালেন ও তাকে তাঁর ব্যবসার কাজে নিযুক্ত করলেন। এরপর মদন খুব পরিশ্রম করে চাকরিটা করল ও অনেক টাকা উপার্জন করল। এইভাবে সাধুবাবার কথাটাও ফলল ও মদন চোরতাড়ান সিং-এর হাত থেকেও বেঁচে গেল।

Please type a word or or words to search.

Featured Post

Archive

Select a month to view the archive.

Back to Top
Admission: General Information: Grievances:
You can call us.

For direct enquiries please contact our Front Office at (91) 33 24413804 / 3805 / 4131
from 9.00 AM to 1.00 PM on weekdays and
from 9.00 AM to 12.00 noon on Saturdays